জধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্প্রতি এক যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি টিম। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ভোরে শুরু হওয়া এই অভিযানে ২২ জন দালালকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের মধ্যে পাঁচজন নারীও রয়েছেন। অভিযানের পর আটককৃতদের ভ্রম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনদের ঠকিয়ে অবৈধভাবে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়াই দালালদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। তারা রোগীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়, যা শুধুমাত্র তাদের নিজের স্বার্থে লাভবান হওয়ার জন্য করা হতো। এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যই এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানটি ছিল পরিকল্পিত এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত। হাসপাতালের ভেতরে রোগীর ছদ্মবেশে প্রবেশ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দালালদের চিহ্নিত করে। অভিযানে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে কাজ করেছেন, যাতে দালালরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে না পারে।
গ্রেফতারকৃত ২২ জনের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে, যা তাদের দীর্ঘদিনের কার্যকলাপের ফলস্বরূপ। স্থানীয় হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল এবং তারা রোগীদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ আদায় করত।
অভিযানের পরে, ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মহিদুর রহমান ভ্রম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, “এই হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা মানুষদের ঠকানো হচ্ছে। আমরা এ ধরনের কার্যকলাপকে কঠোরভাবে দমন করতে চাই।” আদালত দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে ২২ দালালকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন, যা একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে কাজ করবে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ধরনের অভিযানের ফলে সমাজে একটি বার্তা যায় যে, আইন অমান্যকারী কেউ অধিকার পাবে না। জনসাধারণের মধ্যে এর ফলে সচেতনতা বাড়বে এবং তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে আরো অবগত হবে। হাসপাতালের সেবা নিতে আসা মানুষদের নিরাপত্তা এবং সঠিক চিকিৎসা পেতে এই অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই অভিযান প্রমাণ করলো যে, দেশীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার কার্যক্রমে কতটা সচেতন এবং সক্রিয়। এটি শুধু দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান নয়, বরং সমাজের প্রতি এক ধরনের দায়িত্ববোধের প্রকাশ। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত হবে এবং দেশের স্বাস্থ্য খাতকে আরো সতর্ক, সুষ্ঠু ও সুরক্ষিত করতে সাহায্য করবে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালিত এই অভিযানটি আমাদের দেখিয়েছে যে, অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আমাদের সমাজকে সচেতন এবং সক্রিয় থাকতে হবে। এই অভিযানে গ্রেফতারকৃত দালালদের শাস্তির মাধ্যমে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যা সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।