বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মেজবাউল হক সম্প্রতি একটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তার অভিযুক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। এই কেলেঙ্কারির গভীরতা এবং এর প্রভাব, উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, আমরা বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করি।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ঘটনার সূচনা ঘটে। হ্যাকাররা ফিলিপাইনের রিজল ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেয় যা বাংলাদেশের রিজার্ভের অংশ ছিল। এই ঘটনার পর দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও ব্যাংকিং সিস্টেমের অখণ্ডতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল।
মেজবাউল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে বিদেশি দুটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকের সুরক্ষিত আইটি রুমে নিয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি সেখানে আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করেন। সাম্প্রতিক তথ্যে এসেছে যে, সিআইডি মেজবাউল হকের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে যে তিনি সংশ্লিষ্টতার সাথে জড়িত।
সিআইডির তদন্তের প্রেক্ষিতে, ইমিগ্রেশন পুলিশ মেজবাউল হকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ এর মাধ্যমে তদন্তের স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করা যায়। তবে, এমন পরিস্থিতিতেও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি বিভাগ, ব্যাংক সুপারভিশন ও মানবসম্পদসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন।
মেজবাউল হকের নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর, ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করেন, একজন অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে এই গুরুত্বের সাথে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হলে ব্যাংকের নীতি ও কার্যক্রমের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তার পছন্দের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডিপার্টমেন্টে বসানোর ফলে, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো আরও বাড়তে পারে।
মেজবাউল হকের মতো কর্মকর্তার কার্যক্রম দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ওপর একটি গভীর প্রভাব ফেলে। এটি শুধু ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমকেই দুর্বল করে না, বরং সাধারণ মানুষের আস্থা এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায়, ব্যাংকিং কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
মেজবাউল হকের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন, যাতে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সত্যতা প্রাপ্ত হয়। এই বিষয়ে সরকারের এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উচিত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ব্যাংকিং সেক্টরের স্বচ্ছতা এবং নীতির প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।