বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দুর্নীতি একটি পুরোনো সমস্যা, যা নানা সময়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ভিপি তফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি পৌরসভা ভবন নির্মাণ না করেই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই ঘটনার তদন্তের প্রাথমিক তথ্য ও প্রমাণাদি উঠে এসেছে, যা অনেকেই জানতে চাচ্ছেন।
ভিপি তফাজ্জল হোসেন, যিনি ছাত্রদল নেতা নয়ন হত্যার মামলার আসামি এবং বর্তমানে পলাতক, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে একাধিক অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০২৪ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ও ১৯ ফেব্রুয়ারি, তিনি দুইটি চেকে ৫০ লাখ করে মোট এক কোটি টাকা বাঞ্ছারামপুর ইউসিবি ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন।
তথ্য অনুযায়ী, সাবেক মেয়র তফাজ্জল পৌরসভার নিজস্ব ভূমিতে বিনা টেন্ডারে অত্যন্ত গোপনে এই টাকা উত্তোলন করেন। এর পেছনে একটি নাটক সাজানো হয়েছিল, যেখানে দশদোনা গ্রামের আবিদ মিয়ার ছেলে কারন মিয়া পৌরসভার কাছে চিকিৎসার জন্য ঋণের আবেদন করেন। সাবেক মেয়র ওই আবেদনের ভিত্তিতে পৌর সচিব ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে টাকার ব্যবস্থাপনা করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু বাস্তবে টাকা উত্তোলন করেন তার আপন শ্যালক লিটন।
পৌরসভার সচিব হাবিব উল্লাহ খান বলেছেন, “বিষয়টি আমি জানতাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের দাপুটে এই মেয়রের বিরুদ্ধে কথা বলার ক্ষমতা আমার ছিল না।” এই দৃষ্টান্ত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং অনিয়ম প্রতিরোধে সচিবদের মতো কর্মকর্তাদেরও কতটা চাপের মধ্যে থাকতে হয়।
যখন সাবেক মেয়রের শ্যালক লিটন মিয়াকে ফোন করা হয়, তখন তিনি বলেন, “এক বছর আগের কাহিনী আমার মনে নেই।” এটি ইঙ্গিত করে যে, তিনি এই ঘটনার বিষয়ে অসচেতন বা অস্বীকৃত থাকার চেষ্টা করছেন।
কারন মিয়া যখন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, “আমি মেয়রের দোকানে কাজ করি। আমাকে দিয়ে আবেদন করিয়েছিলেন, আমি এর বেশি কিছু জানি না।” এটি পরিষ্কার করে যে, তিনি এ ঘটনার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন কিনা তাও পরিষ্কার নয়।
বর্তমান পৌর প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, “সাবেক মেয়র যা করেছেন তা গুরুতর অনিয়ম।” তিনি এই ঘটনার উপর নজরদারি রাখতে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেছেন, “তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে আমি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।” এটি নির্দেশ করে যে, প্রশাসনিকভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, যা সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।
বাঞ্ছারামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ভিপি তফাজ্জল হোসেনের এই দুর্নীতির ঘটনা আমাদের সামনে প্রশাসনিক দুর্নীতির এক নতুন চিত্র অঙ্কিত করেছে। এটি একটি বড় প্রশ্ন উত্থাপন করে যে, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার কতটা ভয়াবহ হতে পারে এবং এর ফলে সাধারণ মানুষের ওপর কেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং প্রশাসনের উপর জনসাধারণের আস্থার ওপর ভিত্তি করে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এই ঘটনা আমাদের শিখতে দিতে পারে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা, প্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে একটি উন্নত সমাজ গঠন সম্ভব।